তরণী তুমি করো মোরে পার

আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন-ব্যর্থ কবিরা পরিচালক হিসেবে ভালো হয়। কুরোসাওয়াও কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন শুরুতে, পরে নির্মাতা হিসেবে নাম করেছেন।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ক্ষেত্রেও একথা খাটে। কবিতা লিখতে লিখতেই তিনি নির্মাতা হলেন। আমি কবি বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের চেয়ে নির্মাতা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকেই বড় করে দেখি।

হুমায়ূন আহমেদও কবিতা লিখে বোনের নাম করে পত্রিকায় পাঠিয়েছিলেন, সেটি প্রকাশিতও হয়েছিলো। অনেক লেখকের যাত্রাই কবিতা দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সকলে কবি হয়ে ওঠেন না।

আমি কবিতা লিখি, আমি কবি। কবিতার খাতিরেই আমি অসংখ্য বইয়ের পথ মাড়িয়েছি। সব তো মনে নেই, থাকেও না। যেগুলো আছে, দেখি নিজের ভেতর স্তুপ হয়ে জমে আছে। সেই স্তুপই উঁকি দেয় এখন।

পাঠ বিষয়টা অনেকটা গলা সাধার মতো। আজ সকালে যেই সা-টা যেই নোটে লাগছে, বিকেলের গানে সেই সা-টা ঠিক ওই নোটে লাগবে না। ওই নোটে লাগবে কবে,কে জানে! কিন্তু একদিন হুট করে যখন সুরটা লেগে যাবে, তখন মনে হবে আমি তো অনেক আগে এই সা-টা সেধেছি।

তাই গুরুরা বারবার বলেন, রেওয়াজ করো। তুমি যত বড় হও, যত প্রতিষ্ঠিত হও, যত গুণী হও-রেওয়াজ ছেড়ো না। পাঠও তেমন। কখন কোন পাঠ কোথায় এসে তরণী পার করে দেবে,কে জানে!

একদিন এক পড়ুয়া শিষ্য তার গুরুকে এসে বলল—
গুরুদেব, আমি এত বই পড়ি, তবু মনে কিছুই থাকে না। সব যেন ফাঁকা হয়ে যায়।

গুরু কিছু না বলে তাকে একটি ছিদ্রওয়ালা বালতি দিয়ে কূপ থেকে জল তুলতে বললেন। শিষ্য জল তুলতে লাগল, কিন্তু জল বারবার ফুরিয়ে যাচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে সে বলল-
এটা তো বৃথা কাজ! যতবারই জল তুলি, ততবারই খালি হয়ে যায়।

গুরু মৃদু হেসে বললেন-
সেটাই তো আসল শিক্ষা। দেখো, বালতিটা এখন ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে গেছে। পাঠও তেমনই। তুমি ভেবেছ কিছু রইল না, অথচ তোমার ভেতরটা অজান্তেই ধুয়ে গেছে।

Similar Posts