হারাই হারাই সদা করি ভয়
ঋতুপর্ণ ঘোষের আবহমান সিনেমার একটা দৃশ্য আছে যেখানে মমতাশংকর দিপংকরকে আক্ষেপ করে বলছেন-আমি তোমার নায়িকা হতে পারলাম না,প্রেমিকা তো হতে পারতাম।আমি সোজা তোমার বউ হয়ে গেলাম।দুজনে মিলে লুকিয়ে সিনেমা দেখলাম না,বাড়িতে মিথ্যে কথা বলে দীঘায় ঘুরতে গেলাম না।কেউ আপত্তি করলোনা,কেউ বারণ করলোনা!
সহজে পাওয়া যায় এমন কিছুর প্রতি মানুষের সহজাত অবহেলা থাকে।অর্থনীতিতে চাহিদা ও যোগান তত্ত্ব সবসময় বলে চাহিদার তুলনায় যোগান কখনও সমান হতে নেই।যোগানের পরিমাণ সবসময় কম হতে হয়।তবেই ভারসাম্য বিন্দু পাওয়া যায়।সহজলভ্য ধারণার সংগে আরেকটা ধারণাও আছে দুষ্প্রাপ্যতা।তার দিকেই মানুষের ঝোঁক বেশি।

ফ্রিদা কাহলো গাটছড়া বেঁধেছিলেন রিভেরার সংগে।তিনি নিজেকে যত যোগান দিয়েছেন রিভেরা ততোই মনভোলা রাখালের মত ছুটেছেন।রিভেরা ছেড়ে যাননি,ছিলেন যেটুকু আঘাত তাতে ফ্রিদারই ছিলো।
রুদ্র সাদা কাগজে সই করিয়ে যত সহজে পেয়েছিলেন তসলিমাকে,হারাতেও দেরি করেননি ততো।যাপন দিয়ে ভালোবাসাকে যে আঘাত করা যায় তার উদাহরণ হয়ে রইলেন দুজনেই।
সৈয়দ হক লিখেছিলেন- মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।
আমি বলছিনা পেলেই ভালোবাসা হারায়।আমি বলছি এক ধরণের আড়াল তৈরী হয়।আড়াল করার এই ধোকা মন আমাদের প্রতিনিয়ত দেয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষ ফানাহ হবার মত,রুবারু হওয়ার মত ভালোবাসতে পারেনা।কারণ মানুষ বাঁচিয়ে রাখবার জন্য মানুষের নিজের মস্তিষ্ক তার অজান্তেই লড়াই করে যাচ্ছে।যা কিছু মানুষের জন্য হুমকি স্বরূপ সেসব কিছুকে মস্তিষ্ক খুব দ্রুত অন্য এক অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পাঠিয়ে দেয়।
যে কারণে আমরা ভুলে যেতে পারি তীব্রাতিতীব্র দুঃখও।
নইলে ভাবুন তো মাকে হারানোর শোকও মানুষ ভোলে কী কর!আমি বলি ভোলেনা। আড়াল হয়।